ধর্ম: ইজতেমার মূল উদ্দেশ্য হলো, সারা বিশ্বের প্রতিটি মানুষের কাছে দ্বীনের দাওয়াত পৌঁছে দেওয়া। তাবলিগ অর্থই প্রচার করা। অর্থাৎ দ্বীনের দাওয়াত বিশ্বের আনাচে-কানাচে প্রচার-প্রসার করা। তাবলিগ নবী-রাসুলদের কাজ : আল্লাহতায়ালা পৃথিবীতে মানবজাতির হেদায়েতের জন্য যুগে যুগে অসংখ্য নবী-রাসুল পাঠিয়েছেন। তারা তাবলিগ বা দ্বীনের প্রচার কাজে নিয়োজিত ছিলেন। তাই বলা যায়, পৃথিবীর সূচনার সঙ্গে সঙ্গেই তাবলিগ শুরু হয়েছে এবং উম্মতে মুহাম্মদীর মাধ্যমে কেয়ামত অবধি দ্বীনের নবীওয়ালা এই কাজ অব্যাহত থাকবে। পবিত্র কোরআনের ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি তোমাদের কাছে আমার প্রতিপালকের বার্তাগুলো পৌঁছে থাকি এবং আমি তোমাদের এক বিশ্বস্ত কল্যাণকামী।’ সুরা আরাফ : ৬৮
কোরআনে তাবলিগ প্রসঙ্গ: পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘(হে রাসুল!) তোমার প্রতি তোমার প্রতিপালকের পক্ষ হতে যা কিছু নাজিল করা হয়েছে, তা প্রচার কর, যদি তা না কর তবে তার অর্থ হবে তুমি আল্লাহর বার্তা পৌঁছালে না। আল্লাহ তোমাকে মানুষের ষড়যন্ত্র থেকে রক্ষা করবেন। আল্লাহ কাফের স¤প্রদায়কে হেদায়েত দান করবেন না।’ সুরা মায়িদা: ৬৭
আরেক আয়াতে বর্ণিত হয়েছে, ‘তুমি নিজ প্রতিপালকের পথে মানুষকে ডাকবে হেকমত ও সদুপদেশের মাধ্যমে আর (যদি কখনো বিতর্কের দরকার পড়ে, তবে) তাদের সঙ্গে বিতর্ক করবে উৎকৃষ্ট পন্থায়। নিশ্চয়ই তোমার প্রতিপালক যারা তার পথ থেকে বিচ্যুত হয়েছে, তাদের সম্পর্কে ভালোভাবে জানেন এবং তিনি তাদের সম্পর্কেও পরিপূর্ণ জ্ঞাত, যারা সৎ পথে প্রতিষ্ঠিত।’ সুরা নাহল : ১২৫
ইরশাদ হয়েছে, ‘(হে নবী!) বলে দাও, এই আমার পথ, আমি পরিপূর্ণ উপলব্ধির সঙ্গে আল্লাহর দিকে ডাকি এবং যারা আমার অনুসরণ করে তারাও। আল্লাহ (সব রকম) শিরক থেকে পবিত্র। যারা আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক করে, আমি তাদের অন্তর্ভুক্ত নই।’ সুরা ইউসুফ : ১০৮
হাদিসে তাবলিগ প্রসঙ্গ : আল্লাহতায়ালা যেমন নবীকে তাবলিগের নির্দেশ দিয়েছেন, তেমনি নবী কারিম (সা.) তার উম্মতকে তাবলিগের নির্দেশ দিয়েছেন। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী কারিম (সা.) বলেছেন, ‘আমার পক্ষ থেকে জনগণকে (আল্লাহর বিধান) পৌঁছে দাও, যদিও একটি আয়াত হয়। বনী ইসরাইল থেকে (ঘটনা) বর্ণনা কর, তাতে কোনো ক্ষতি নেই। আর যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে আমার প্রতি মিথ্যা (বা জাল হাদিস) আরোপ করল, সে যেন নিজ আশ্রয় জাহান্নামে বানিয়ে নিল।’ -সহিহ বোখারি : ৩৪৬১
রাসুলুল্লাহ (সা.) সারাজীবন তাবলিগ করেছেন, তাবলিগের উদ্দেশ্যে তায়েফ গমন করেছেন, হিজরত করে মক্কা থেকে মদিনায় গেছেন, মদিনা থেকে আবার মক্কায় ফিরে এসেছেন- উদ্দেশ্য তাবলিগ। আর রাসুলে কারিম (সা.)-এর সর্বশেষ ভাষণও ছিল তাবলিগের ওপর। বিদায় হজে আরাফার ময়দানে জাবালে রহমতের পাদদেশে দাঁড়িয়ে সোয়া লাখ সাহাবিকে সামনে রেখে এই তাবলিগের কথাই তিনি উচ্চারণ করেছিলেন। হজরত আবু বকরা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, (একদা) হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) ‘জনতার উদেশে বক্তৃতা দিচ্ছিলেন। তিনি (নবী কারিম সা.) বললেন, তোমরা কি জানো না আজ কোন দিন? তারা বললেন, আল্লাহ ও তার রাসুলই এ সম্পর্কে অধিক জ্ঞাত। (বর্ণনাকারী বলেন) এতে আমরা মনে করলাম হয়তো তিনি অন্য কোনো নামে এ দিনটির নামকরণ করবেন। এরপর তিনি (নবী কারিম (সা.) বললেন, এটি কি ইয়াওমুন নাহর (কোরবানির দিন) নয়? আমরা বললাম হ্যাঁ, ইয়া রাসুলাল্লাহ! এরপর তিনি বললেন, এটি কোন নগর? এটি হারাম নগর (সংরক্ষিত শহর) নয়? আমরা বললাম হ্যাঁ, ইয়া রাসুলাল্লাহ! তিনি বললেন, নিঃসন্দেহ তোমাদের এ নগরে, এ মাসের এ দিনটি তোমাদের জন্য যেরূপ হারাম, তোমাদের (একের) রক্ত, সম্পদ, ইজ্জত ও চামড়া অপরের জন্য তেমনি হারাম। শোন! আমি কি তোমাদের নিকট পৌঁছিয়েছি (দ্বীনের বাণী)? আমরা বললাম, হ্যাঁ। তখন তিনি বললেন, হে আল্লাহ! তুমি সাক্ষী থাক। (অতঃপর বললেন) উপস্থিত ব্যক্তি যেন (আমার বাণী) অনুপস্থিতের নিকট পৌঁছিয়ে দেয়। কেননা অনেক প্রচারক এমন ব্যক্তির নিকট (আমার বাণী) পৌঁছাবে যারা তার চাইতে অধিক সংরক্ষণকারী হবে। বস্তুত ব্যাপারটি তাই। এরপর নবী কারিম (সা.) বললেন, আমার পরে একে অপরের গর্দান মেরে কুফরির দিকে ফিরে যেয়ো না।’ সহিহ বোখারি : ১৭৩৯
""বি:দ্র: এই সাইটের কোন লেখা বা ছবি কপি করা আইনত দন্ডণীয়""
Copyright © 2025 www.digantapratidin.com. All rights reserved.